ন্যূনতমমজুরী
শ্রম আইন ২০০৬ ন্যূনতম মজুরী শব্দটি কে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি, বরং শিল্প অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরী হার নির্ধারণের জন্য একটি নিম্নতম মজুরী বোর্ড স্থাপন করে থাকে। শিল্পের ভিত্তিতে সরকার দ্বারা মজুরী বোর্ডের সুপারিশে / উল্লেখিত নির্দেশে ন্যূনতম মজুরী হার নির্ধারণ করা হয়, ত্রিপক্ষীয় এই বিশেষ মজুরী বোর্ড শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩৮ ধারার অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিম্নতম মজুরীর হার সুপারিশ করার ক্ষেত্রে, এই মজুরী বোর্ড জীবন যাপন ব্যয়, জীবন যাপনের মান, উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ, দেশের এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কারণসমূহ বিবেচনা করে থাকে। যদি উপরোক্ত বিষয়সমূহের কোনো পরিবর্তন হয় (এক থেকে তিন বছরের মধ্যে), তবে নিম্নতম মজুরী বোর্ড সেই সকল সুপারিশ সংশোধন করার জন্য সুপারিস করতে পারবে।যে কোনো শিল্পের নিম্ননতম মজুরী হার প্রতি পাঁচ বছর পর পর সরকার নির্দেশে পুনরায় নির্ধারিত হবে। ন্যূনতম মজুরীর হার শিল্পের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় এবং এটি সংশ্লিষ্ট সকল নিয়োগকর্তার জন্য প্রযোজ্য। শ্রমিকদেরকে নিম্নতম মজুরী প্রদানে অস্বীকৃতি প্রকাশ করা দণ্ডনীয় অপরাধ, যার জন্য এক বছরের কারাদণ্ড, ৫০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় প্রকার শাস্তি প্রযোজ্য।
একটি পৃথক ইপিজেড নিম্নতম মজুরী বোর্ড (EPZ Minimum Wages Board) রয়েছে যেখানে শ্রমিক, নিয়োগকর্তা ও সরকারসহ সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এই পরিষদ শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরীর হারের সুপারিশগুলো করে, আর EPZ কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা রয়েছে সেই সব মজুরীর হারগুলো ঘোষণা করার।
(শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩৮-১৪২, ১৪৮-১৪৯, ২৮৯(১) এবং ৩২৯ অনুযায়ী; বাংলাদেশের EPZ শ্রম আইন, ২০১৯ এর ৬৫-৭২ )।
হালনাগাদ ন্যূনতম বেতনের হারের জন্য দয়া করে ন্যূনতম বেতন বিভাগটি দেখুন।
নিয়মিতপারিশ্রমিক
“মজুরী” বলতে এমন সকল পারিশ্রমিক বোঝায় যা চাকরির শর্ত অনুযায়ী শ্রমিককে কাজ করার জন্য আর্থিকভাবে প্রদান করা হয়, যার মধ্যে বোনাস, অতিরিক্ত পারিশ্রমিক, ছুটি বা অধিকাল কর্মের জন্য প্রদেয় অর্থ, আদালতের আদেশ বা রোয়েদাদ অনুযায়ী প্রদেয় অর্থ, চাকুরীর অবসান বা ছাঁটাইয়ের জন্য প্রদেয় অর্থ এবং লে-অফ বা সাময়িক বরখাস্তের জন্য প্রদেয় অর্থ অন্তর্ভুক্ত। তবে, এতে বাসস্থান, চিকিৎসা সুবিধা, ভবিষ্য তহবিলে মালিক কর্তৃক প্রদত্ত চাঁদা, ভ্রমণ ভাতা বা কাজের কারণে বিশেষ খরচ বহনের জন্য প্রদত্ত অর্থ অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রত্যেক নিয়োগকর্তা তার দ্বারা নিয়োগকৃত সকল শ্রমিকের মজুরী পরিশোধের জন্য দায়ী। যদি ঠিকাদারের অধীনে নিযুক্ত কোনো শ্রমিক মজুরী না পেয়ে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তা দ্বারা সেই মজুরী পরিশোধ করা আবশ্যক। মজুরীর পরিশোধের সর্বোচ্চ সময়সীমা এক মাস। প্রত্যেক শ্রমিককে তার প্রাপ্য মজুরী এক মাস কর্মকাল শেষ হওয়ার পরবর্তী ৭দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। অনুরূপ বিধানবলী EPZ শ্রম আইন ২০১৯ এ পাওয়া যায়।
কোনো শ্রমিক যদি অবসরে যায় বা তার নিয়োগকর্তা দ্বারা ছাঁটাই, অপসারন, বরখাস্ত এবং অন্য কোনোভাবে চাকরিচ্যুত হয়ে থাকে, তাহলে চাকরির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার বা চাকরি মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। যেকোনো মজুরী অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়াতে চেক এবং কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিক পক্ষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইলেক্ট্রনিক ট্র্যান্সফার বা অন্য কোন ডিজিটাল মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। পারিশ্রমিক অবশ্যই কার্য দিবসে পরিশোধ করতে হবে। শ্রম আইন ধারা ১২৫ অনুযায়ী কোন প্রকার অনুমোদিত সিদ্ধান্ত ছাড়া শ্রমিকের মজুরী কর্তন করা যাবে না।
২০১৫-এর আইনের ২০২২ সংশোধনী অনুযায়ী মূল মজুরীর ৫% হারে বার্ষিক বৃদ্ধিকে বাধ্যতামূলক করার আবশ্যকতাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এছাড়া, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ডিসেম্বর ১, ২০২৪ থেকে আরএমজি শ্রমিকদের জন্য ৯% হাড়ে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি ঘোষণা করেছে।
উৎস: শ্রম আইন ২০০৬ -এর ১২০-১২৫ ; SRO নং ২৮৪ আইন/২০২২ “বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০১৫ এর সংশোধনী”; বাংলাদেশের EPZ শ্রম আইন,২০১৯ এর ২৬ , নিম্নতম মজুরি এবং বার্ষিক মজুরী বৃদ্ধি পর্যালোচনা, ৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে গেজেট প্রকাশিত (গেজেট নং- ৪০.০০.০০০০.০১৬.০০৯.২৪-২০৭)।