পারিশ্রমিকসহছুটি/বার্ষিকছুটি
শ্রমিকের বয়স এবং শিল্পকারখানা এবং এই ধরণের অন্যান্য সীমাবদ্ধতার উপর ভিত্তিতে বার্ষিক ছুটির অনুমোদন পরিবর্তন নির্ভর করে।
একটি প্রতিষ্ঠানে সব শ্রমিকদের বার্ষিক ছুটি পাওয়ার যোগ্য হওয়ার জন্য শেষ ১২ মাসের মধ্যে কমপক্ষে ২৪০ দিন একটানা করতে হবে। এই ১ বছরের কাজের সময়ে যেকোনো ধরণের কর্মবিরতি, পারিশ্রমিকসহ ছুটি, দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার কারনে মজুরীসহ/ ছাড়া ছুটি, ১২০ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটি, ছাঁটাই বা বৈধ ধর্মঘট বা কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে কাজ ব্যহত হওয়া সত্ত্বেও অন্তর্ভুক্ত হবে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক ১৮ দিন কাজ করার জন্য মজুরীসহ এক দিন বার্ষিক ছুটি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে (দোকান, বান্যিজ্যিক বা শিল্প প্রতিষ্ঠান, কারখানা বা সড়ক পরিবহন সেবার ক্ষেত্রে), ২২ দিন কাজ করার জন্য (চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য), এবং ১১ দিন কাজ করার জন্য (সংবাদপত্রে কাজ করার জন্য)।
একজন কিশোর শ্রমিক ১ দিন মজুরীসহ ছুটি পাওয়ার অধিকার রাখেঃ প্রতি ১৫ দিন কাজের জন্য (কারখানার শ্রমিক), প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য (চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য), এবং প্রতি ১৪ দিন কাজের জন্য (দোকান বা বান্যিজ্যিক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক)। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার শ্রমিকদের পূর্ববর্তী ১২ মাসের প্রতি ২২ দিন কাজ করার জন্য ১ দিন মজুরীসহ ছুটি নেয়ার অধিকার আছে।
বার্ষিক ছুটি অন্য যেকোনো সময়ে অন্য ছুটির সাথে নেয়া যেতে পারে।
এক বছরের মধ্যে জমাকৃত ছুটি পরবর্তী ১২ মাসের মধ্যে নেয়া যেতে পারে, শর্তসাপেক্ষে যেকোনো ছুটি পরবর্তী বছরের সাথে যোগ হয়ে সর্বোচ্চ ৪০, ৬০ বা ৮০ দিনের মত অনুমদিত হবে। জমাকৃত এই অনুমোদিত ছুটি পরবর্তী বছরে যোগ করে প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ৪০ দিন পর্যন্ত শিল্প কারখানা বা সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠানের, এবং ৬০ দিন পর্যন্ত চা বাগান, দোকান, বান্যিজ্যিক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য নেয়া যাবে।
কিশোর শ্রমিকদের ক্ষেত্রে জমাকৃত এই ছুটি শিল্প কারখানা বা চা এর দোকানের পরবর্তী বছরের ৬০ দিন পর্যন্ত এবং দোকান বা বান্যিজ্যিক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৮০ দিন পর্যন্ত নেয়া যাবে। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের শ্রমিকদের বার্ষিক এই ছুটি পরবর্তী ৩০ দিন পর্যন্ত নেয়া যাবে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যদি কোন শ্রমিক ছুটি না নেয়, সেক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা আর্থিকভাবে সেই শ্রমিককে সেই দিনের মজুরী পরিশোধ করতে পারে।
বার্ষিক ছুটিকে বিভিন্ন সময়ের মধ্যে বিভক্ত করা যেতে পারে, তবে শ্রম আইন অনুসারে এইটাও উল্লেখ করা যেতে পারে যে একই সময়ে বার্ষিক ছুটি নেয়ার জন্যে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে ৪ দিনের কম নয় এবং কিশোরদের জন্যে ৫ দিনের কম হতে পারবে না।
এই আইনের অধীন কোন শ্রমিককে মঞ্জুরকৃত ছুটি বা বন্ধের জন্য যে হারে মজুরী প্রদেয় তাহা হবে- তিনি তাহার ছুটির অব্যবহিত পূর্ববর্তী মাসে যে দিনগুলোতে কাজ করেছেন সেই দিনগুলোর জন্য প্রদত্ত, তার মহার্ঘ্য ভাতা, বর্তমান প্রয়োজনমতো বা অন্তর্বর্তীকালীন (যদি থাকে) ভাতাসহ পূর্ণ সময়ের দৈনিক মজুরীর গড়ের সমান প্রদেয় হবে, তবে এর মধ্যে থেকে বোনাস এবং ওভারটাইম বাদ যাবে।
ছুটি শুরু হওয়ার আগে থেকে শ্রমিকের মজুরী প্রদান করতে হবে, যেখানে মজুরী প্রদানের সময় হল প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৪ বা তার অধিক দিন এবং কিশোরদের ক্ষেত্রে ৫ বা তার অধিক দিন। শ্রম আইনে ২০২২ সংশোধনীতে বার্ষিক ছুটির শুরু থেকে মজুরীর হিসেব ও অর্থপ্রদানের বিষয়টিরও সুরাহা করেছে।
বার্ষিক ছুটি ছাড়া সকল শ্রমিকদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১ বছরের মধ্যে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটির অনুমোদন রয়েছে, শুধুমাত্র চা বাগানের শ্রমিক ব্যতীত।
অর্জিত ছুটি (বার্ষিক ছুটি) ও নৈমিত্তিক ছুটি সংক্রান্ত অনুরূপ বিধানবলী EPZ শ্রম আইন ২০১৯ এ পাওয়া যায়।
উৎস: শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৪, ১১৫, ১১৭ ও ১১৯, ১৯৮৯ সালের বেপজা নিয়মাবলী নং.১ এর ধারা ১১; SRO-র৮২ , নং ২৮৪ আইন/২০২২ “বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০১৫ র সংশোধনী”; বাংলাদেশের EPZ শ্রম আইন, ২০১৯ এর ৫০ ও ৫২ ।
সরকারীছুটিতেপারিশ্রমিকেরহার
প্রত্যেক শ্রমিককে প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে মজুরীসহ ১১ দিনের ছুটি মঞ্জুর করতে হবে। বাংলাদেশে সাধারণত ধর্মীয় এবং স্মৃতিস্মারকধর্মী স্বরূপ দুই ধরনের সরকারি ছুটি প্রচলিত আছে। ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (১২ই রবিউল আউয়াল এ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর জন্ম বার্ষিকী), আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস (২১শে ফেব্রুয়ারি), স্বাধীনতা দিবস (২৬শে মার্চ), বাংলা নববর্ষ (১৪ই এপ্রিল), মে দিবস (১লা মে), বৌদ্ধ পূর্ণিমা (প্রথাগত চন্দ্র পঞ্জিকা দ্বারা নির্ধারিত), শবে-বরাত, লাইলাতুল কদর, ঈদ-উল-ফিতর (ইসলামিক রমজান মাসের শেষে ৩দিন), কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী (১৭ই আগস্ট), বিজয়া দশমী/ দুর্গা পূজা, ঈদ-উল-আযহা (১০ই জিলহজ্জ, ৩দিন), আশুরা(১০ই মহররম), বিজয় দিবস (১৬ই ডিসেম্বর) এবং বড়দিন (২৫ই ডিসেম্বর)।
সরকারি ছুটির দিনগুলোতে, শ্রমিকদেরকে তাদের মহার্ঘ্য ভাতা এবং এড-হক অন্তর্বর্তীকালীন মজুরীসহ (যদি থেকে থাকে) সম্পূর্ণ দৈনিক মজুরী প্রদান করা হবে, তবে এর থেকে ওভারটাইম ভাতা এবং বোনাস বাদ যাবে।
নিয়োগকর্তাদের জন্য প্রত্যেক স্থায়ী শ্রমিককে তাদের নিজেদের ধর্মীয় উৎসবের সময় একটি ক্যালেন্ডার বর্ষে দুই মাসের মূল মজুরীর সমপরিমাণ উৎসবজনিত বোনাস প্রদান করা আবশ্যক।
অনুরূপ EPZ শ্রম আইনের অধীনে, শ্রমিকরা বছরে ১১ দিন উৎসবজনিত ছুটি পাবার অধিকারী। কোন শ্রমিককে যদি উক্ত উৎসবজনিত ছুটির দিনে কাজ করতে হয়, তাহলে নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই দুই দিনের ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি ও সেই সঙ্গে সম্পূর্ণ মজুরী পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে তাকে দিতে হবে।
উৎস: শ্রম আইন ২০০৬, ধারা ১১৮, ১১৯; বাংলাদেশের EPZ শ্রম আইন ২০১৯ এর ৫৩, শ্রম বিধিমালার ২০১৫ র ১১১।