নোটিশ এবং বিভাজন

This page was last updated on: 2025-02-04

নোটিশএরপ্রয়োজনীয়তা

কোন শ্রমিক বিনা নোটিশে চাকরি থেকে ছাঁটাই, বরখাস্ত (গুরুতর অসদাচরনের জন্য) অথবা চুক্তি বাতিল হলে, তাকে অবশ্যই একটি লিখিত নোটিশ দিতে হবে। চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়ার ক্ষেত্রে, নিয়োগকর্তা তার শ্রমিককে ১ মাসের নোটিশ প্রদান করবে। বিনা কারণে চাকরির অবসানের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই নিম্নলিখিত নোটিশকাল পালন করতে হবেঃ

১) স্থায়ী শ্রমিকের ক্ষেত্রেঃ ১২০ দিনের নোটিশ যদি শ্রমিককে মাস হিসেবে মজুরী দেওয়া হয় এবং ৬০ দিনের নোটিশ অন্যান্য শ্রমিকদের জন্য।

২) অস্থায়ী শ্রমিকের জন্য (যদি চাকরিচ্যুতি সেই অস্থায়ী কাজের সমাপ্তি, বিলুপ্তি বা বন্ধ হওয়ার কারণে না হয় যার জন্য শ্রমিক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন): মাসিক ভিত্তিতে মজুরীপ্রাপ্ত অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য ৩০ দিনের নোটিশ; এবং অন্যান্য অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য ১৪ দিনের নোটিশ প্রদান।

অনুরূপ বিধানবলী EPZ শ্রম আইন ২০১৯ এ পাওয়া যায়। পরিচালনা ব্যবস্থা এবং দক্ষতা সংক্রান্ত কর্মচ্যুতির জন্য কোন সংবিধিবদ্ধ নোটিশের প্রয়োজন হয় না। নিয়োগকর্তা যদি চায় তবে, ছাঁটাই, পরিচালনার কারণে অপসারণ এবং দক্ষতা সংক্রান্ত কারণে চাকরীচ্যুত করার নোটিশ দেওয়ার পরিবর্তে নোটিশ-পে প্রদান করতে পারে। অসদাচরণ এবং অপরাধমূলক কারণে চাকরিচ্যুত করার ক্ষেত্রে কোন নোটিশকালের প্রয়োজন হয় না। শ্রমিককে তার দোষ বা অপরাধ সম্পর্কে লিখিতভাবে অবগত করতে হবে, ৭দিনের মধ্যে সেই অভিযোগের প্রতিরোধে বক্তব্য প্রদান এবং সেই বক্তব্য শুনে বিচার করার অধিকার রাখে। সকল পদচ্যুত শ্রমিকদের তার নিয়োগকর্তার কাছে থেকে নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ হতে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার রাখে। যদি এই সমস্যার সমাধান না হয়ে থাকে, তবে তা শ্রম আদালতে হস্তান্তর করা হয়।

কোন শ্রমিক যদি নিয়োগচুক্তির অবসান ঘটাতে চান, তাহলে তাকে অবশ্যই লিখিত আকারে একটি ৩০ দিনের নোটিশ দিতে হবে অথবা বিজ্ঞপ্তির পরিবর্তে নোটিশ-পে প্রদান করতে হবে। অস্থায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে, আবশ্যক নোটীশকাল হল ১৫ দিন।

উৎস: শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২০(১), ২৪ এবং ২৬; বাংলাদেশের EPZ শ্রম আইন ২০১৯-এর §২২-২৩

বিচ্ছেদ মজুরী

শ্রম আইনের অধীনে, একজন শ্রমিককে অবসানকালীন মজুরী তখনই প্রদান করা হয়, যখন একজন শ্রমিক টানা বছরের জন্য কাজ করার পর শারীরিক, মানসিক অক্ষমতা বা দীর্ঘ সময় অসুস্থতার কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে (ডিসচার্জ হিসেবে পরিচিত)। উল্লেখিত শ্রমিককে অবিচ্ছিন্নভাবে টানা ১ বছর কাজ করার জন্য ৩০ দিন হারে প্রত্যেক বছরের, মজুরী বা গ্রাচুইটি, যেইটা বেশি হয়, প্রদান করতে হবে। ২০১৩ র সংশোধনী আইনের অধীনে, গ্র্যাচুইটি(gratuity)-র অর্থ প্রদানের হার হল ১০ বছর অবধি কর্মজীবনের জন্য প্রতি পূর্ণ বছরের জন্য ৩০ দিনের মজুরী। ১০ বছরের বেশি কর্মজীবনের ক্ষেত্রে গ্র্যাচুইটি হবে প্রতি পূর্ণ বছরের জন্য ৪৫ দিনের মজুরী করা হয়েছে।

কোন শ্রমিক যদি চাকরি ছাড়ার জন্য নিজে থেকে নোটিশ প্রদান করে থাকে এবং যদি সে পাঁচ বা তার অধিক কিন্তু দশ বছরের কম সময় ধরে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে থাকে তাহলে প্রতি বছর কাজের জন্য ১৪ দিনের মজুরী ; (খ) যদি সে ১০ বা তার অধিক বছর সময় ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে থাকে তাহলে সে প্রতি পূর্ণ বছর কাজের জন্য ৩০ দিনের মজুরী অথবা গ্রাচুইটি (যদি থেকে থাকে), তবে যেটা বেশি হয়ে থাকবে, সেই পরিমাণ তাকে প্রদান করতে হবে। অসদাচরণের জন্য যদি কোন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত (যাকে বরখাস্ত হিসেবে ধরা হয়) করা হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে শ্রমিক কোনো ধরনের অবসানকালীন ক্ষতিপূরণ পাবে না।

কোন শ্রমিক যদি নিয়োগকর্তার সাথে কমপক্ষে টানা ১ বছর অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে থাকে, তবে ছাঁটাই করার ক্ষেত্রে, শ্রমিককে প্রত্যেক বছর সেবার জন্য কমপক্ষে ৩০ দিনের মজুরী প্রদান করতে হবে। যদি কোন নিয়োগকর্তা সিদ্ধান্ত নেয় যে কোন কর্মীকে ৪৫ দিন লে-অফ (কর্ম বিচ্ছিন্নতার সময়কাল) সময়ের পরে, ছাঁটাই পদ্ধতিতে চাকরিচ্যুত করা হয়, তবে সেই কর্মীকে অতিরিক্ত মজুরী ছাড়াও আরও ১৫ দিনের মজুরী পাওয়ার অধিকার রাখে।

EPZ শ্রম আইনের অধীনে, একজন শ্রমিক যদি তার কাজ থেকে ইস্তফা দেন, তবে নিয়োগকর্তা নিম্নলিখিত হারে শ্রমিকের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করবেন: i. ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে কাজের মেয়াদের ক্ষেত্রে, প্রতিটি পূর্ণ বছরের জন্য ১৫ দিনের মজুরী। ii. ১০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে কাজের মেয়াদের ক্ষেত্রে, প্রতিটি পূর্ণ বছরের জন্য ৩০ দিনের মজুরী।

এদিকে EPZ শ্রম আইনের আবশ্যকতা অনুসারে নিয়োগর্তাদের তাদের শ্রমিকদের জন্য পেনশন তহবিল (provident fund) গঠন করতে ও বজায় রাখতে হবে, অন্যদিকে শ্রম আইন, ২০০৬ এর অধীনে তা ঐচ্ছিক, যদিনা শ্রমিকদের ৭৫% এই ধরনের তহবিল তৈরির জন্য তাদের নিয়োকর্তার কাছে দাবি রাখেন। সেই সঙ্গে নিয়োগকর্তাদের জন্য পেনশন তহবিল সদস্যদের বিদ্যমান কোন সুযোগ-সুবিধা বা অন্য কোন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ। শ্রমিকদের তাদের মাসিক মূল বেতনের ৭-৮% যোগদান রাশি হিসেবে দিতে হবে। নিয়োগকর্তাদের পেনশন তহবিল একই শতাংশ হারে অর্থ প্রদান করতে হবে EPZ শ্রম আইনের অধীনে, কোনো শ্রমিক যদি পেনশন তহবিল সদস্য হন এবং সেই তহবিল থেকে নিয়োগকর্তার অবদানসহ কোনো সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হন, তাহলে চাকরি ছাড়ার কারণ যাই হোক না কেন—যেমন ছাঁটাই, অব্যাহতি, বরখাস্ত, অবসর, অপসারণ, চাকরির সমাপ্তি বা মৃত্যু—সেই শ্রমিককে ওই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

EPZ শ্রম আইনের অধীনে, EPZ-গুলিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকদের কল্যানের জন্য একটি নিয়োগকর্তা-ক্রেতা-শ্রমিক অংশগ্রহণমূলক তহবিলের বন্দোবস্তও রয়েছে। এই তহবিলের প্রধান উদ্দেশ্য হল, শ্রমিকদের আপদকালীন সহায়তা, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি প্রদান করা।

উৎস: শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২(১০), ১৬(৭), ১৯, ২০(৩), ২২(২), ২৭(৪), ২৯ এবং ২৬৪; বাংলাদেশের EPZ শ্রম আইন ২০১৯-এর §২৩, ২৫, ১৬৪ এবং ১৭২।

Loading...