This page was last updated on:
2025-02-04
নিয়োগকর্তারলক্ষনীয়বিষয়
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রতিটি শ্রমিকের একটি মৌলিক অধিকার, যা তারা আইনগতভাবে পাওয়ার অধিকারী। শ্রমিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং কর্মক্ষেত্রে সর্বোত্তম পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা চর্চা উৎসাহিত করা মালিকের দায়িত্ব। শ্রম আইন ২০০৬ পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কর্মক্ষেত্রের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ও আরামদায়ক তাপমাত্রা বজায় রাখা, কৃত্রিম আর্দ্রতা ব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত ভিড় এড়ানো, পর্যাপ্ত আলো চলাচলের ব্যবস্থা, অগ্নি-সংক্রান্ত নিরাপত্তা, অতিরিক্ত ভারী বস্তু উত্তোলনে সুরক্ষা বিধান, ভবন ও যন্ত্রপাতির কাঠামোগত নিরাপত্তা, যন্ত্রপাতির সঠিক ঘেরের ব্যবস্থা, চলন্ত যন্ত্রপাতির কাছে কাজ করার সময় নিরাপত্তা বিধান, বিস্ফোরক বা দাহ্য পদার্থ থেকে সুরক্ষা, বিপজ্জনক ধোঁয়া থেকে রক্ষার সতর্কতা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (PPE) ব্যবহার এবং ঝুঁকি নিরূপণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। এসব বিধানের কার্যকর বাস্তবায়ন শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।শ্রম আইন এবং ২০১৫ সালের বিধিমালা উভয়ই নিয়োগকর্তাকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত নিষ্কাশন সরঞ্জাম, যেমন 'ডাস্ট সাকার', স্থাপনের নির্দেশ দেয়, যাতে ধুলো ও ধোঁয়া কার্যকরভাবে নিষ্কাশন করা যায়। ধুলো ও ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশে কর্মরত শ্রমিকদের অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের জন্য পানযোগ্য পানি সরবরাহ করা নিয়োগকর্তার দায়িত্ব। যেখানে ২৫০ জনের বেশি কর্মী কাজ করেন, সেখানে ১লা এপ্রিল থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ক্যান্টিন, ডাইনিং রুম এবং বিশ্রাম কক্ষে ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রম আইন আরও নির্দেশ দেয় যে, পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যা পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলের উপযোগী হতে হবে।
২৫ জন বা তার বেশি সংখ্যক শ্রমিক রয়েছে এমন যে কোন কর্মস্থলে পানীয় জলের সরবরাহসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক খাবার কক্ষের বন্দোবস্ত করা ও তা ভালমতো পরিচালনা করা আবশ্যক। যেখানে একটি কর্মস্থলে ক্যান্টিন রয়েছে, সেখানে কর্মীদের তাদের কাজের জায়গায় খাওয়া-দাওয়া করা নিষিদ্ধ।
সেই প্রতিটি কারখানায় যেখানে ৫০ বা তার বেশি সংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন, সেখানে মালিককে অবশ্যই শ্রমিক ও মালিকের তরফে সমান প্রতিনিধিত্বসহ একটি নিরাপত্তা কমিটি (সেইফটি কমিটি) গঠন করতে হবে।
সেই প্রতিটি কর্মস্থলে যেখানে ১০০ বা তার বেশি সংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন, সেখানে মালিককে অবশ্যই একটি ক্যান্টিন তৈরি করতে হবে এবং ক্যান্টিন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে।
অনুরূপ বিধানবলী EPZ শ্রম আইনে পাওয়া যায়।
উৎস: উৎস: শ্রম আইন ২০০৬-এর §৫২-৫৯, ৯০-ক, ৯২, ৯৩; বাংলাদেশের শ্রম আইন, ২০১৫-র নিয়ম ৪৬, ৫০, ৫৯ ও ৮১; SRO নং ২৮৪- আইন/২০২২, “বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০১৫-র সংশোধনী”; বাংলাদেশের EPZ শ্রম আইন, ২০১৯-এর §৩৫।
বিনামূল্যেসুরক্ষা
শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারায় শ্রমিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (Personal Protection Equipment) প্রদানের বিধান রয়েছে। যেখানে কাজের প্রক্রিয়ার সময় শ্রমিকের চোখে কণা বা ভগ্নাংশ আঘাত হানার ঝুঁকি থাকে, অথবা অতিরিক্ত আলো বা তাপের সংস্পর্শে এসে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে কর্মীদের চোখ সুরক্ষার জন্য কার্যকর পর্দা বা উপযুক্ত গগলস সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। এই ব্যবস্থা কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের কাজের দক্ষতাও বৃদ্ধি করে।
যে কোনো বিপজ্জনক কাজ, যা শারীরিক আঘাত, বিষক্রিয়া বা রোগের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, সেক্ষেত্রে মালিকের দায়িত্ব হলো সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত বা সেই কাজের আশেপাশে অবস্থানকারী সকল শ্রমিকের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা। একইসঙ্গে, কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো নির্দিষ্ট উপাদান বা প্রক্রিয়ার ব্যবহার এবং ক্ষয়কারী রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদর্শন করে নোটিশ প্রদান করাও মালিকের দায়িত্ব। এইসব ব্যবস্থাপনা শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যে কাজের সঙ্গে বিস্ফোরক বা দাহ্য ধুলো, গ্যাস ইত্যাদি জড়িত, সে ক্ষেত্রে মালিক শ্রমিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (Personal Safety Equipment) সরবরাহ ও তা ব্যবহারের নিশ্চয়তা প্রদান ছাড়া কোনো শ্রমিককে কাজের জন্য নিযুক্ত করতে পারবেন না। এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদানের এবং ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়ে একটি রেকর্ড বই মালিকের নির্দেশনায় সংরক্ষণ করতে হবে। তবে, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের পরও যদি শ্রমিকরা তা ব্যবহার না করেন, তাহলে এর জন্য সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরাই দায়ী হবেন।নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের জন্য সমস্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে সরবরাহ করতে বাধ্য এবং এই সুবিধাগুলোর জন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে কোনো ব্যয় আদায় করা যাবে না।
উৎস ৭৮ এবং ৩৩০, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬; বিধি ৬৭, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫।
প্রশিক্ষন
কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করা আবশ্যক। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এটি সংরক্ষণে একটি রেকর্ড বুক রাখতে হবে।
একজন মালিক তার অধীনে কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার উপর একটি বাস্তব এবং প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষন প্রদান করতে এবং কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য একটি সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকে। একজন নিয়োগকর্তাকে কর্মক্ষেত্রে প্রশিক্ষন প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যে সব বিপজ্জনক কাজ রয়েছে, যা শারীরিক আঘাত, বিষক্রিয়া বা রোগের গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, সে ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার দায়িত্ব হলো কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা নিশ্চিত করা এবং যারা এ ধরনের কাজে নিয়োজিত হতে অযোগ্য, তাদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা। এমন কাজের সঙ্গে জড়িত এবং বিপজ্জনক যন্ত্রপাতিতে কাজ করা শ্রমিকদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের নিয়মিত তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হবে।
উৎস: (শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪০(১খ),৭৮(ক৩),৭৯(গ))।
শ্রমপরিদর্শনব্যবস্থা
শ্রম আইনের অধীনে, পরিদর্শক পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি এবং মনিটরিং করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শ্রম পরিদর্শকদের আইন অনুযায়ী কোনো কর্মস্থলে প্রবেশ করে সেখানে আইন অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা তা মূল্যায়ন করার, রেজিস্টার এবং অন্যান্য দলিলের অনুরোধ করার এবং গত দুই মাসের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো শ্রমিককে পরীক্ষা করার অধিকার রয়েছে। পরিদর্শকের এখতিয়ার রয়েছে নিয়োগকর্তাকে পেশাগত ঝুঁকি প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়ার এবং যদি লংঙ্ঘনটি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ও তাত্ক্ষণিক বিপদ সৃষ্টি করে, তবে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার।
একজন পরিদর্শক, প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তাকে অবহিত করে, সাধারণ কর্মঘণ্টার মধ্যে যে কোনো সময় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত বা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে রাখা কোনো পদার্থের যথেষ্ট পরিমাণ নমুনা সংগ্রহ করতে পারেন, যদি পরিদর্শক মনে করেন যে, তা নিয়মের পরিপন্থী বা কর্মীদের শারীরিক আঘাত বা স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ হতে পারে। যদি পরিদর্শক মনে করেন যে, কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের জীবনের বা নিরাপত্তার জন্য তাত্ক্ষণিক ও জরুরি বিপদ রয়েছে, তবে তিনি লিখিত আদেশের মাধ্যমে তার মতামতের কারণ উল্লেখ করে, নিয়োগকর্তাকে ওই বিপদ নিরসিত না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত "ফ্যাক্টরি ও প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শন বিভাগ" (DIFE), যা ২৩টি জেলা অফিস নিয়ে গঠিত, কর্মীদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে শ্রম আইন বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালন করে। DIFE শুধুমাত্র একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়, বরং এটি নিয়োগকর্তা এবং কর্মীদের আইনি বিধান অনুসরণ করতে সহায়তা করে।
উৎস: (শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৬১(২),৮৪(১), ৮৫(৩),৩১৮ ও ৩১৯)
স্বাস্থ্যএবংসুরক্ষারবিধানঃ
-
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ / Bangladesh Labour Act 2006
-
বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ / Bangladesh Labour Rules, 2015
-
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৯ / Bangladesh EPZ Labour Act 2019
-
SRO নং ২৮৪ আইন/২০২২ “বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০১৫ এর সংশোধনী” / SRO No. 284- Law/2022, “Amendment of Bangladesh Labour Rule 2015”